Muttaqin BD

"এটি সেই কিতাব, যাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই, মুত্তাকীনদের জন্য হিদায়াত।"

29 January 2020

Quran Mazid | Android Apps Review | Best Quran Apps Ever

কুরআনের কোন অ্যাপ্স নিজের স্মার্টফোনে ইনস্টল করবেন যদি আপনি আমাকে সাজেস্ট করতে বলেন,  তাহলে আমি সবার প্রথমেই আপনাকে এই Quran Mazid অ্যাপ্সটিই ইন্সটল করতে বলব। প্লে-স্টোর এর যতগুলো কুরআনের  অ্যাপ্স রয়েছে তার মধ্যে এই অ্যাপ্সটি-ই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। 

Quran Mazid apk
Quazn Mazid APK

অ্যাপ্সটি যে-কারনে অন্যগুলো থেকে আলাদা -

  1. প্রতিটি আয়াতের জন্য পাচ্ছেন আলাদা আলাদা অনেকগুলো তাফসীর।
  2. প্রতিটি আয়াতের জন্য পাচ্ছেন আলাদা আলাদা অনেকগুলো তরজমা।
  3. নজরকাড়া ফন্ট ডিজাইন, আরাবিক অসংখ্যা ফন্ট ডিজাইন ইচ্ছেমত চেইঞ্জ করতে পারবেন।
  4. সূরা, পারা, পৃষ্ঠা ও মঞ্জিলভিত্তিক আলাদা ক্যাটাগরী। বিষয়ভিত্তিক কুরআনের আয়াত এর আলাদা অপশন। ব্যক্তিগতভাবেও আলাদা ক্যাটাগরী করে অনেকগুলো আয়াতকে সেইভ করে রাখার সিস্টেম।
  5. কুরআন হিফজ করার আলাদা একটি ফিচার, যেটা অফলাইনে অ্যাপ্সের মাধ্যমেই পাবেন। 
  6. এছাড়াও আরেকটি আকর্ষণীয় ফিচার হচ্ছে, অনেকগুলো বিখ্যাত ক্বারীর কন্ঠ আয়াত শুনতে এবং পড়তে পারবেন একই সাথে। যেখানে রয়েছে আয়াতগুলো স্ক্রল করার সুবিধা।


(১) তাফসীরঃ

প্রতিটি আলাদা আয়াতের জন্য থাকছে মোট ১৭টি তাফসীর। প্রথমত, Tafsir Abu Bakar Zakaria (বাংলা) এবং Ibn Kathir (ইংরেজি) পাবেন ইনস্টল করার পর পরই। অন্যান্য যে তাফসীরগুলো, সেগুলো পরবর্তীতে অফলাইনে পড়ার জন্য আপনামে প্রথমে ডাউনলোড করে নিতে হবে।

যে ১৭টি তাফসীর এই অ্যাপ্সটিতে পাওয়া যাবে -
ভাষা তাফসীর
বাংলা
(১) ইবনে কাছির {Partial}
(২) ইবনে কাছির {সম্পূর্ণ}
(৩) তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ
(৪) তাফসীরে আহসানুল বয়ান
(৫) তাফসীরে আবু বকর যাকারীয়া
আরাবিক
(৬) Baghawy Tafseer
(৭) Muyassar Tafseer
(৮) Qurtubi Tafseer
(৯) Sa3di Tafseer
(১০) Tabari Tafseer
(১১) Tanweer Tafseer
(১২) Waseet Tafseer
(১৩) E3rab - Qasim Hamidan Da's
উর্দু
(১৪) তাফসীরে আহসানুল বয়ান
(১৫) তাফসীরে ইবনে কাছির
ইংরেজি
(১৬) Tafseer Ibn Kathir
ইন্দোনেশিয়ান
(১৭) তাফসীরে ইবনে কাছির



(২) তরজমা বা অনুবাদঃ

অনুবাদের জন্যেও রয়েছে অনেকগুলো মাধ্যম। মোট ৪৭টি তরজমার মধ্যে প্রথমে পাচ্ছেন Sahih Internatonal (ইংরেজি) এবং Bayan Foundation (বাংলা) এর অফলাইন অনুবাদ। মূলত গবেষণামুলক কাজের জন্য এই অ্যাপ্সটি আপনার জন্য খুবই কাজে দিবে। অনেকে আবার জু'মার খুৎবা তৈরি করতে এই  অ্যাপ্সের সাহায্য নেন বলে জানিয়েছেন।

যেসকল অনুবাদগুলো এই অ্যাপ্সটিতে পাওয়া যাবে
ভাষা অনুবাদ
Bangla
(1) Bayaan Foundation
(2) Taisirul Quran
(3) Mujibur Rahman
(4) Fozlur Rahman
English
(5) Sahih International
(6) Abdul Haleem
(7)Mohsin Khan(Al-Hilali)
(8) Mufti Taqi Usmani
(9) Pickthall
(10) Yusuf Ali
Hindi
(11) Farooq(Nadwi)
(12) Md. Farooq (Ahmed)
Spanish
(13) Julio Cortes
(14) Sheikh Isa Garcia
Albanian
(15) Sherif Ahmeti
Amharic
(16) Sadiq (Sani Habib)
Azerbaijani
(17) Alikhan Musayev
Bosnian
(18) Besim Korkut
Chinese
(19) Ma Jian (Simplified)
Divehi
(20) Office of the President of Maldives
Dutch
(21) Salomo Keyzar
Farsi
(22) Hussein Taji kal Deri
French
(23) Muhammad Hamidullah
German
(24) Bubenheim (Elyas)
Hausa
(25) Abubakar Mahmoud Gumi
Indonesian
(26) Bahasa
Italian
(27) Hamza Roberto Piccardo
Kurdish
(28) Burhan Muhammad-Amin
Malay
(29) Muhammad Basmeih
Malayalam
(30) Karakunnu (Elayavoor)
Nepali
(31) Islami Sangh Nepal
Pashto
(32) Abdul Wali Khan
Portuguese
(33) Samir El Hayek
Russian
(34) Elmir Kuliev
(35) Abu Adel
Sindhi
(36) Taj Mehmood Amroti
Somali
(37) Mahmud Muhammad Abduh
Swahili
(38) Ali Muhsin Al-Barwani
Swedish
(39) Mohammed Knut Bernstrom
Tamil
(40) Jan Trust Foundation
Telegu
(41) Divya Quran Sandesham
Thai
(42) King Fahad Quran Complex
Turkish
(43) Diyanet Isleri
Urdu
(44) Muhammad Junagarhi
Uyghur
(45) Muhammad Saleh
Uzbek
(46) M. Sodik(M. Yousuf)


(৩) ফন্ট ডিজাইনঃ

অ্যাপ্সটিতে পাচ্ছেন নজরকাড়া বাংলা এবং কুরআনের বিভিন্ন ফন্ট (ইন্দপাক এবং উসমানী এরাবিক স্ক্রিপ্ট) ডিজাইন। এছাড়াও ফন্টের আকার বড় ছোট করার সুবিধাও রয়েছে। ফলে আপনি যে ডিজাইন এর ফন্ট পড়তে সাচ্ছন্দবোধ করেন সেটি পড়তে পারবেন। আবার অনেকের চোখের সমস্যা থাকলেও ফন্ট বড় করে পড়তে পারবেন।


(৪) ক্যাটাগরীঃ

যেকোন সময়, যেকোন মুহুর্তে নির্দির্ষ্ট কোন আয়াত বের করা যাবে খুব সহজে এই অ্যাপ্সের মাধ্যমে। যেখানে  ব্যবহারকারীদের সুবিধার জন্য সূরা, পারা, পেজ এবং হিজব ক্যাটাগরীতে ভাগ করা হয়েছে। এছাড়াও বিষয়ভিত্তিক আয়াতগুলোকে জড়ো করে একটি মেনু তৈরি করা হয়েছে যাতে সহজেই নির্দির্ষ্ট আয়াতগুলো বের করা যায়। আবার চাইলে ব্যক্তিগতভাবে ক্যাটাগরী তৈরি করেও সেভ করে রাখা যাবে, যেটা বুকমার্ক হিশেবে পরিচিত। পাঠকের সর্বশেষ পড়া আয়াত অটোম্যাটিক সেভ করে রাখাও অ্যাপ্সটির আরেকটি ভালো দিক।


(৫) কুরআন হিফজঃ

হিফজ করার এই ফিচারটি এই অ্যাপ্স এর একটি অনন্য ফিচার বলে আমার মনে হয়। এখানে আপনি চাইলে স্ব-প্রণোদিত হয়ে নিজে নিজে একটি সিলেবাস বানিয়ে প্যান তৈরি করতে হিফজ সম্পন্ন করতে পারেন। এ পর্যন্ত কেউ অ্যাপ্সটির মাধ্যমে হাফেজ হয়েছে কিনা জানিনা তবে কিছুটা হলেও যে কাজে লেগেছে এটা শতভাগ। এই ফিচারটি একেবারেই নতুন এসেছে, ভবিষ্যতে আশা করি আরও আপডেট কিছু আনা হবে, ইনশা আল্লাহ।


(৬) অডিও তেলাওয়াতঃ

শুদ্ধ করে কুরআন শিখতে চাইলে প্রসিদ্ধ ক্বারীর তেলাওয়াত শুনে আয়াত পড়তে পারবেন এই ফিচারটির মাধ্যমে। প্রায় ১৯টির-ও বেশি ক্বারীর কণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াত শুনতে পারবেন প্রত্যেকটি আয়াতের জন্য। 


(৭) শব্দে শব্দে কুরআনঃ

প্রতিটি আয়াত বোঝা এবং আয়ত্ব করার জন্য এই পদ্ধতিটি বেশ কার্যকর। আয়াতের প্রতিটি শব্দকে আলাদা আলাদা করে শব্দার্থ মুখস্ত করে সহজেই বুঝে-শুনে হৃদয়মঙ্গম করতে পারবেন। "শব্দে শব্দে কোরআন" এর এই ফিচারে বাংলা, ইংলিশ, ইন্দুনেশিয়ান এই চারটি ভাষার শব্দার্থ পাওয়া যাবে।


এছাড়াও রয়েছে -

  • অ্যাপ্সটির রয়েছে আলাদা ওয়েবসাইট, যেখান থেকে আপনি অনলাইনে কুরআন মাজিদ পড়তে পারবেন অথবা রেফারেন্স দিতে পারবেন যেকোন  মূহুর্তে। লিঙ্কঃ এখানে
  • রয়েছে দান করার সুযোগ। প্রতিনিয়ত অ্যাপ্সটিতে নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করা হচ্ছে। অ্যাপ্স ডেভেলপের  জন্য অর্থের দরকার হয়। আপনি চাইলে এখানে নিজের  সাদকায়ে জারিয়াও যুক্ত করতে পারেন।


অন্যান্য তথ্যঃ
Last Updated
Decembar/2019
Version
4.0.4
APK Size
32 MeghaBytes (MB)
Download
100,000+


ডাউনলোড লিঙ্কঃ এখানে


25 January 2020

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম এর তাফসীর

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম


বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম কুরআন মাজিদের সুরা নামলের একটি আয়াত বা অংশ। সুরা তাওবা ব্যতিত প্রত্যেক সুরার প্রথমে বিসমিল্লাহ লেখা হয়। এটি সুরা আল-ফাতিহার অংশ, না অন্যান্য সকল সুরারই অংশ, এতে ঈমামগণ ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ) বলেছেন, সুরা নামল ব্যতিত অন্য কোন সুরার অংশ নয়। তবে এটি এমন একটি স্বয়ংসম্পুর্ন আয়াত যা প্রত্যেক সুরার প্রথমে লেখা এবং দু'টি সুরার মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করার জন্য অবতীর্ণ হয়েছে।

বিসমিল্লাহ'এর তাফসীর

বিসমিল্লাহ বাক্যটি তিনটি শব্দ দ্বারা গঠিত।

প্রথমতঃ 'বা' বর্ণ
দ্বিতীয়তঃ'ইসম' বর্ন এবং
তৃতীয়তঃ'আল্লাহ'


(১) 'বা' বর্ণ 


আরবী ভাষায় 'বা' বর্ণটি অনেক ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তন্মধ্যে তিনটি অর্থ এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। এবং এই তিনটির মধ্যে যেকোন একটি অর্থ এ ক্ষেত্রে গ্রহণ করা যেতে পারে। 

ক. সংযোজন, অর্থাৎ এক বস্তুকে অপর বস্তুর সাথে মিলানো বা সংযোজন ঘটানো।
খ. এস্তেয়ানাত, অর্থাৎ কোন বস্তুর সাহায্য নেয়া।
গ. কোন বস্তু থেকে বরকত হাসিল করা।


(২) 'ইসম' বর্ণ


'ইসম' শব্দের ব্যাখ্যা অত্যন্ত ব্যাপক। মোটামটিভাবে এতটুকু যেনে রাখা যথেষ্ট যে, 'ইসম' নামকে (Noun)বলা হয়। অর্থাৎ নামের সাথে বোঝানো হলে 'ইসম' ব্যবহার করা হয়।


(৩) 'আল্লাহ' শব্দ


'আল্লাহ' শব্দ সৃষ্টিকর্তার নামসমুহের মধ্যে সবচেয়ে মহত্ত্বর ও তার যাবতীয় গুণাবলীর সম্মিলিত রুপ। কোন কোন আলেম একে ইসমে আ'যম বলেও অভিহিত করেছেন। এই নামটি আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো জন্য প্রযোজ্য নয়। এজন্যই এই শব্দটির দ্বিবচন বা বহুবচন হয় না। কেননা আল্লাহ এক, তার কোন শরীক নেই। মোটকথা, আল্লাহ এমন এক সত্ত্বার নাম, যে সত্ত্বা পালনকর্তার সমস্ত গুনাবলীর এক অসাধারণ প্রকাশবাচক। তিনি অদ্বিতীয় ও নজীরবিহীন।


সর্বোপরি, বিসমিল্লাহ শব্দের মধ্যে 'বা'-এর তিনটি অর্থের সামঞ্জস্য করলে এর তিনটি অর্থ দাঁড়াতে পারে-
এক. আল্লাহর নামের সাথে
দুই. আল্লাহর নামের সাহায্যে
তিন. আল্লাহ নামের বরকতে

কুরআন তেলওয়াত ও প্রত্যেক কাজ বিসমিল্লাহ'সহ আরম্ভ করার আদেশ

জাহেলিয়াত যুগে লোকদের অভ্যাস ছিল, তারা তাদের প্রত্যেক কাজ উপাস্য দেব-দেবীদের নামে শুরু করত। এ প্রথা রহিত করার জন্য হযরত জীব্রাইল (আঃ) পবিত্র কোরআনের সর্বপ্রথম যে আয়াত নিয়ে এসেছিলেন, তাতে আল্লাহর নামে কোরআন তেলওয়াত আরম্ভ করার আদেশ দেয়া হয়েছে (পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে)

কোন কোন বর্ণনায় দেখা যায়, স্বয়ং রাসূলে করিম (সাঃ)-ও প্রথমে প্রত্যেক কাজ "বিসমিকা আল্লাহুম্মা" বলে আরম্ভ করতেন এবং কোন কিছু লেখাতে হলেও এ কথা প্রথমে লেখাতেন। কিন্তু "বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম" অবতীর্ণ হওয়ার পর সর্বকালের জন্য 'বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম' বলে সব কাজ শুরু করার নিয়ম প্রবর্তিত হয়েছে।
-(কুরতুবি,রূহূল মা'আনী)

কোরআনুল কারীমের স্থানে স্থানে উপদেশ হয়েছে যে, প্রত্যেক কাজ "বিসমিল্লাহ" বলে আরম্ভ কর। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "যে কাজ বিসমিল্লাহ ব্যতিত আরম্ভ করা হয় না, তাতে কোন বরকত থাকে না।"

এক হাদীসে এরশাদ হয়েছে যে, ঘরের দরজা বন্ধ করতে বিসমিল্লাহ বলবে, বাতু নেভাতে বিসমিল্লাহ বলবে, পাত্র আবৃত করতেও বিসমিল্লাহ বলবে। কোন কিছু খেতে, পানি অয়ান করতে, অজু করতে, সওয়ারীতে আরোহন করতে এবং তা থেকে অবতরনকালেও বিসমল্লাহ বলার নির্দেশ কোরআন-হাদিসে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে।
-(কুরতুবি)

-(তাফসীরে মাআরেফুল ক্বোরআন)

24 January 2020

"একটা মজার তাফসীর বলি" সিরিজ | মাসউদ আলিমী | পর্ব ০৩

যেদিন রাসূলের একমাত্র পুত্র সন্তানটি মারা গেল, সেদিন মক্কার কাফেররা ছিল উল্লাসিত! তারা বলে বেড়াচ্ছিল-
"মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদি স্রষ্টার প্রকৃত রাসূলই হয়, মুহাম্মাদকে যদি আল্লাহ ভালোবেসেই থাকেন, তাহলে তাকে নির্বংশ কেন রাখবেন? কেন তার পুত্র সন্তান বাঁচে না?  মুহাম্মাদ মারা গেলে তো তার বংশও সমাপ্ত। সাথে সাথে তার নাম উজ্জ্বল করার মত আর কেউ থাকবে না। আর দেখো, আমাদের প্রত্যেকের কত যোদ্ধাবাজ পুত্রসন্তান...."

তখন আল্লাহ তা'আলা এ আয়াত নাযিল করেনঃ
"হে নবী! তোমার নাম-চিহ্ন কোন দিন মুছবে না, বরং তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীরাই হবে নির্বংশ ও নির্মূল।"
(সূরা কাউছারঃ ৩)

আজ ১৪ শত বছর গত হয়েছে। পৃথিবীর প্রতিটা অলিগলিতে, প্রতিটা মানুষের হৃদয়ের গহীনে রাসূলের নাম। রাসূলের ভালবাসা। রাসূলকে যারা একবার হলেও দেখেছে, তাদের বংশধরও তা নিয়ে গর্ব করে। কিন্তু সেসব কাফেরদের বংশধররা আজ কোথায়? কোথায় তাদের গৌরব ও নাম উজ্জলকারী পুত্রসন্তানেরা? যদি কেউ থেকেও থাকে, তবু তাদের নামে পরিচয় দিতে চায় না!

আল্লাহ প্রমাণ করে দিলেন, ইতিহাসের পাতায় নাম উজ্জ্বল করার জন্য পুত্র সন্তান লাগে না। নিঃসন্তানকেও তিনি কিয়ামাত পর্যন্ত বংশ গৌরবের চেয়ে উঁচু মর্তবা দিতে পারেন।


[তাফসীরে ইবনে কাছীর]
লেখাঃ মাসউদ আলিমী
একটি মজার তাফসীর বলি... সিরিজটি বই আকারে প্রকাশিত হচ্ছে। সিরিজটির উদ্ভাবক মাসউদ আলিমী, একজন লেখক, অনুবাদক। এর পাশাপাশি তিনি সোশাল মিডিয়ায়ও ইসলামিক লেখালেখি করেন। সম্পুর্ন সিরিজটি পড়তে সবাইকে বইটি সংগ্রহ করে পড়ার অনুরোধ রইলো।
লেখকের ফেইজবুক আইডিঃ এখানে 

21 January 2020

"একটা মজার তাফসীর বলি" সিরিজ | মাসউদ আলিমী | পর্ব ০২

একবার মদীনায় একটা চুরির ঘটনা ঘটে। রিফা'আ ইবনে যায়েদ (রাঃ) এর ঘর থেকে এক বস্তা আটা চুরি হয়। খাদ্যের ঐ বস্তার সাথে অস্ত্রসস্ত্রও ছিল। এ মামলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত গড়ায়।
রিফা'আ রাঃ প্রায় নিশ্চিত ছিলেন এ কাজ উবাইরিক গোত্রে বাশীর করেছে। কিন্তু পেশ করার মত কোনো প্রমাণ ছিল না। এদিকে উবাইরিক গোত্র যখন দেখল গোমর ফাঁস হয়ে যাচ্ছে, তখন আটার বস্তা এক ইহুদির ঘরে রেখে আসে। রিফা'আর ঘর থেকে ঐ ইহুদীর ঘর পর্যন্ত কিছু আটা ছিটিয়ে দেয়। এরপর রাসূলের কাছে এসে বলল,
"আমরা মুসলমান। আমরা কেন যাব অপর মুসলিম ভাইয়ের ঘরে সিঁদ কাটতে? চুরি করতে? ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা আমাদের উপর অপবাদ! এ চুরি তো করেছে অমুক ইহুদি। বিশ্বাস না হয় সাক্ষী আছে। এমনকি চুরি করে বস্তা নিয়ে যাওয়ার সময় কিছু ময়দা রাস্তায় পড়ে ছিল।"
রিফা'আ রাঃ তখন বলতে থাকেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ!  এরা মিথ্যা বলছে। আপনি এদের কথা শুনবেন। আল্লাহর রাসূল তাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেন।

আল্লাহর নবী গায়েব জানতেন না। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিলেন ঐ ইহুদির হাত কাটার। সাথে আল্লাহ তা'আলা সূরা নিসার ১০৫-১১৩ পর্যন্ত নয়টি আয়াত নাযিল করেন। আসল ঘটনা ফাঁস করে দেন। একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে নবীর মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হবে, এটা আল্লাহ সহ্য করেননি। হোক সে ইহুদি! হোক সে আল্লাহর দুশমন!

শত্রু মরবে, মাজলুম হয়ে মরুক কিংবা অবিচারের শিকার হয়ে, মরলেই হলো! কারো সাথে আমার মনোমালিন্য,  তো কাল সে কোনো বিপদে পড়লে আমার ভালো লাগে। আনন্দ পাই। তার উপর অবিচার হচ্ছে জেনেও চুপ থাকি। প্রতিবাদ তো করিই না, বরং "সাপও মরল, লাঠিও না ভাঙল" প্রবাদটা মেরে সেটা বৈধ করে দিতে চেষ্টা করি।  একই কথা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরের সম্পর্ক আর মনোভাবের ব্যাপারে। কিন্তু এটাও সুস্পষ্ট অন্যায়।

"কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের শক্রতা যেন তোমাদেরকে এর প্রতি প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ন্যায়বিচার করবেনা। তোমরা ন্যায়বিচার কর। ন্যায়ের সঙ্গে থাকা  তাকওয়ার অধিক নিকটবর্তী।" [সূরা মায়েদাঃ ৮]

উল্লেখ্যঃ
১। আল্লাহর নবীর নেয়া সিদ্ধান্ত মোটেও ভুল ছিল না। যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দিছে, দোষটা তাদের।
২। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ভয়ে বাশীর মক্কায় পালিয়ে যায়। সেখানে এক বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে দেয়াল ধ্বসে মুরতাদ অবস্থায় মারা যায়।
[তাফসীরে কুরতবী]


লেখাঃ মাসউদ আলিমী
একটি মজার তাফসীর বলি... সিরিজটি বই আকারে প্রকাশিত হচ্ছে। সিরিজটির উদ্ভাবক মাসউদ আলিমী, একজন লেখক, অনুবাদক। এর পাশাপাশি তিনি সোশাল মিডিয়ায়ও ইসলামিক লেখালেখি করেন। সম্পুর্ন সিরিজটি পড়তে সবাইকে বইটি সংগ্রহ করে পড়ার অনুরোধ রইলো।
লেখকের ফেইজবুক আইডিঃ এখানে 

20 January 2020

Nothing Here

Its only for website design. Please visite again letter. 😊   

18 January 2020

"একটা মজার তাফসীর বলি" সিরিজ | মাসউদ আলিমী | পর্ব ০১

আগে আয়াতটি পড়ুনঃ
"হায় আফসোস! আমি যদি অমুককে বন্ধু রূপে গ্রহণ না করতাম।"




এবার শুনুন মূল ঘটনাঃ

ইসলামের শুরু যুগে। উকবাহ ইবনে আবী মু'আইত। নবীজির সাথে তার ভালো সম্পর্ক। একবার সে নবিজীকে ওয়ালিমার দাওয়াত করল। কিন্তু নবীজি আবদার জুড়ে দিলেন- "উকবাহ, যদি তুমি ইসলাম গ্রহণ না কর, তাহলে তোমার দাওয়াতে যাবো না।" উকবাহ ভাবলো, এ আর এমনকি। সে ইসলাম গ্রহণ করে নিল। নবীজি দাওয়াত খেয়ে চলে গেলেন।

কিন্তু এ ঘটনা উমাইয়া ইবনে খলফ শুনে রেগে গেল। সে ছিল উকবাহ অন্তরঙ্গ বন্ধু। এবং ব্যবসায়ী পার্টনার। উমাইয়াহ বলল, "উকবাহ! যদি তুমি মুহাম্মাদের ধর্ম ত্যাগ না কর, তাহলে তোমার সাথে আমার কোনো বন্ধুত্ব থাকবে না। ব্যবসায় কোনো শেয়ার থাকবে না।" উমাইয়াহ ছিল উকবাহর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাই সে রাজী হয়ে গেল। এবার উমাইয়া রাসূলকে অপমান করার সুযোগটা কাজে লাগালো। বলল, শুধু ধর্ম ত্যাগ করলেই হবে না। মুহাম্মাদের ঘাড় মাড়িয়ে মুখে থুতু মেরে আসতে হবে।

আহ! বন্ধুর খপ্পরে পড়ে উকবাহ নবীজির মুখের দিকে থুতু মেরে বলে- নে তোর ধর্ম!

আল্লামা যহহাক রহি. বলেনঃ
"সে যখন রাসূলের দিকে থুতু দিল, তখন একটা গরম বাতাস সে থুতু তার মুখে নিক্ষেপ করে৷ আর তার ঠোট ও গাল ঝলসে দেয়। এবং এই দাগ মৃত্যু পর্যন্ত ছিল।"
[ তাফসীরে কুরতবী, সূরা ফুরক্বনঃ২৭ আউনুল মা'বূদঃ ৫/১৩৬]

বদরের যুদ্ধে উকবাহ ইবনে আবী মু'আইত বন্দি। যখন তাকে হত্যা করা হবে, তখন সে বল- আমাকে হত্যা করলে আমার বাচ্চাদের কী হবে? নবীজি বললেনঃ আগে নিজের জাহান্নামের চিন্তা কর। বাচ্চাদের আল্লাহ দেখবেন।
[ আবু দাউদঃ ২৬৮৬]

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
"অপরাধী কেয়ামতের দিন স্বীয় হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, ‘হায় আফসোস! আমি যদি রসূলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম। হায় দুর্ভোগ আমার! আমি যদি অমুককে বন্ধু রূপে গ্রহণ না করতাম! আমাকেতো সে বিভ্রান্ত করেছিল আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পর।" [সূরা ফুরক্বনঃ ২৭-২৯]

প্রিয় পাঠক!
আমার বন্ধু কারা? কাদের সাথে আমার উঠাবসা? আমার স্ত্রী কেমন? এসব নিয়ে ভাবা উচিৎ। আজকাল অনেক দীনি ভাই রূপ-সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বেদীন মেয়েকে বিয়ে করে। বলে আস্তে আস্তে দীনের পথে চলে আসবে। অনেকে বদদীন নেতা বা প্রভাবশালীদের সাথে গভীর সম্পর্ক রাখে। তাদের জন্য এ আয়াতে যথেষ্ট শিক্ষা রয়েছে।


লেখাঃ মাসউদ আলিমী
একটি মজার তাফসীর বলি... সিরিজটি বই আকারে প্রকাশিত হচ্ছে। সিরিজটির উদ্ভাবক মাসউদ আলিমী, একজন লেখক, অনুবাদক। এর পাশাপাশি তিনি সোশাল মিডিয়ায়ও ইসলামিক লেখালেখি করেন। সম্পুর্ন সিরিজটি পড়তে সবাইকে বইটি সংগ্রহ করে পড়ার অনুরোধ রইলো।
লেখকের ফেইজবুক আইডিঃ এখানে 

দুয়া কেন কবুল হয় না ও দুয়া কবুল হওয়ার শর্ত

দুআ কেন কবুল হয় না ও দুআ কবুল হওয়ার তিন ধাপ


দুআ কেন কবুল হয় না? অথচ আল্লাহ তাআলা বান্দার দুআ কবুল করার ওয়াদা করেছেন৷ আল্লাহ তাআলার ওয়াদা তো ব্যতিক্রম হতে পারে না৷ তাহলে এত এত দুআ করার পরও কেন দুআ কবুল হয় না?
এক ভাই অনুযোগের সুরে বলেছেন, ২ বছরেরও অধিক সময় ধরে টানা প্রতিদিন তাহাজ্জুদ পড়ে দুআ করছেন, কিন্তু তার দুআ কবুল হওয়া তো দূরের কথা; যে সমস্যা সমাধানের জন্য দুআ করছিলেন, সে সমস্যা আরো বেড়েছে৷


আসুন, আগে আমরা দুআ কবুল না হওয়ার কারণগুলো চিহ্নিত করি:

(১) আল্লাহর হুকুম অমান্য করা৷ এটা বড়ই অযৌক্তিক ব্যাপার যে, আমরা আল্লাহ তাআলার হুকুম লঙ্ঘন করব আবার দুআ কবুলের আশা করে বসে থাকব৷ দুআ কবুল হতে হলে আগে আল্লাহ তাআলার বিধিবিধান মেনে চলতে হবে৷ তাঁকে সন্তুষ্ট করেই দুআ কবুলের আশা পোষণ করতে হবে৷

(২) আল্লাহ তাআলার প্রতি অগাধ বিশ্বাসের ঘাটতি৷ আল্লাহ তাআলার প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে ঠিক, কিন্তু অগাধ বিশ্বাসের ঘাটতি আছে৷ সেই ঘাটতি দূর করতে হবে৷!

"আর আমার বান্দারা যখন আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে, আমি তো রয়েছি সন্নিকটেই। আমি বান্দার প্রার্থনা কবুল করি, যখন সে আমাকে আহ্বান করে। কাজেই তারা যেন আমার হুকুম মেনে চলে এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে। যাতে তারা সঠিক পথের দিশা লাভ করতে পারে।" (বাকারা: ১৮৬)

এই আয়াতে দুটি বিষয় লক্ষণীয়ঃ
"আমি বান্দার প্রার্থনা কবুল করি, যখন সে আমাকে আহ্বান করে।" এই আয়াতে আমরা দুআ কবুলের দুটি শর্ত পেলাম৷
১ম শর্ত- কাজেই তারা যেন আমার হুকুম মেনে চলে৷
২য় শর্ত- আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে।

(৩) খাবার পবিত্র ও হালাল না হওয়া৷ বলতে গেলে দুআ কবুল না হওয়ার এই কারণটি মৌলিক কারণ৷ খাবার যদি পবিত্র ও হালাল না হয়৷ হারাম ও অপবিত্র খাদ্য থেকে শরীরের রক্ত-মাংস গঠিত হয়, পোশাক-পরিচ্ছদ পরা হয়, তাহলে এমন ব্যক্তির দুআ কবুলের দরোজা বন্ধ৷ কুরআনুল কারিমে আমলের আগে পবিত্র খাবার গ্রহণের নির্দেশ এসেছে৷ তাহলে বোঝা গেলো, আমল কবুলের পূর্বশর্ত খাবার হালাল হওয়া৷


"হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু-সামগ্রী হতে আহার কর, এবং নেক আমল কর।" (সুরা মু'মিনুন: ৫১)


রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন- হে লোকসকল! নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা পবিত্র। তিনি শুধু পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন। তিনি মু'মিনদের সেই আদেশই দিয়েছেন, যে আদেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসুলগণকে। আল্লাহ তা’আলা বলেন: ‘‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু-সামগ্রী হতে আহার কর, এবং নেক আমল কর।’’ আরও বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু-সামগ্রী আহার কর, যা আমি তোমাদেরকে রিযিকস্বরূপ দিয়েছি৷" তারপর রাসুল ﷺ এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলি-ধুসরিত ক্লান্ত-শ্রান্ত বদনে আকাশের দিকে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করে ডাকছে: হে আমার প্রভূ! হে আমার প্রভূ! অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারা সে পুষ্টি অর্জন করে। তার প্রার্থনা কিভাবে কবুল হবে? (সহীহ মুসলিম: ১০১৫)


রাসুল ﷺ এর নিকট এ আয়াতটি তিলাওয়াত করা হলো । ‘‘হে মানবমন্ডলী ! পৃথিরীর হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী ভক্ষণ কর।’’ তখন সা'দ ইবনু আবি ওয়াক্কাস রা, দাঁড়িয়ে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কাছে দু’আ করুন যেন আমি দুআ কবুল হওয়া লোক হতে পারি। রাসূল ﷺ বললেন: হে সা‘দ! তোমার পানাহারকে হালাল কর, তবে তুমি দুআ কবুল হওয়া ব্যক্তি হতে পারবে। মনে রেখ, কেউ যদি হারাম খাদ্যের এক লোকমাও মুখে নেয় তাহলে চল্লিশ দিন যাবত তার দু‘আ কবুল হবে না৷ আর বান্দার শরীরের গোশত হারাম থেকে কিংবা সুদ থেকে গঠিত হয়েছে, সে জাহান্নামের সর্বাধিক উপযুক্ত৷ (তাবারানী: ৬৪৯৫)

(৪) গোনাহ ও আল্লাহ তাআলার নাফরমানি দুআ কবুল না হওয়ার বড় কারণ৷ আমরা গোনাহ করে যাবো আবার দুআ কবুলের আশা করব, এমনটা হতে পারে না৷ দুআ কবুল হতে হলে আগে গোনাহ ছাড়তে হবে৷

(৫) আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করাও দুআ কবুল না হওয়ার অন্যতম কারণ৷ আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা প্রকারান্তরে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সম্পর্ক রাখার নামান্তর৷

নবী কারীম ﷺ বলেছেন: যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি দুআ করে, যে দুআতে কোনো পাপ থাকে না ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না, তাহলে আল্লাহ তাআলা তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দুআ অবশ্যই কবুল করে নেন। যে দুআ সে করেছে হুবহু সেভাবে তা কবুল করেন অথবা তার দুআর প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন কিংবা এ দুআর মাধ্যমে তার ওপর আগত কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন। এ কথা শুনে সাহাবিগণ বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দুআ করতে থাকবো। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন: তোমরা যত প্রার্থনাই করবে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করতে পারেন। (বুখারি: আল-আদাবুল মুফরাদ ও আহমদ)

এই হাদিস থেকে আরো পরিষ্কার বোঝা গেলো, শর্ত পাওয়া গেলে সব দুআই আল্লাহ কবুল করেন৷ কোনো দুআ আল্লাহ ফেরত দেন না৷ কোনো দুআ ব্যর্থ বা বেকার যায় না৷

আল্লাহ তাআলা দুআ কবুল করেন তিনভাবেঃ


এক. সে যা চাইবে, যা কামনা করবে হুবহু সেই প্রার্থিত বিষয় বা জিনিস তাকে দিয়ে দেয়া হবে৷ বান্দা তার দুআ কবুলের আলামত নগদ-নগদ দেখতে পাবে৷

দুই. আল্লাহ তাআলা বান্দার দুআর বিনিময়ে তাকে দুনিয়াতে কিছু না দিয়ে পরকালের জন্য রেখে দেন৷ দুনিয়াতে কবুল না হওয়া দুআগুলি কিয়ামতের দিন বিশাল আকারে বান্দার সামনে প্রকাশ পাবে৷ তখন বান্দা আকাঙ্ক্ষা করবে; হায়! দুনিয়াতে একটা দুআও যদি আমার কবুল না হয়ে আখেরাতের জন্য রেখে দেয়া হতো!

তিন. হয়ত তার সামনে কোনো বড় বিপদ-মুসিবত আসন্ন ছিলো৷ আল্লাহ তাআলা জানেন সে যা চেয়ে দুআ করেছে, তার চাইতে আসন্ন বিপদ দূর করা তার জন্য বেশি প্রয়োজন৷ তখন আল্লাহ তাআলা তা-ই করেন৷ সরাসরি প্রার্থিত বস্তু কবুল না করে তার অজ্ঞাতেই তার উপর থেকে বিপদটি দূর করে দেন৷

অথচ বান্দা মনে করে তার দুআ মনে হয় কবুল হয় না৷ পেরেশান হয়ে যায়, অস্থির হয়ে যায়৷ সে বুঝতেই পারে না তার তাহাজ্জুদের সময় বা বিভিন্ন দুআর সময় যে প্রার্থনা করেছে, সেই দুআর বদৌলতে আল্লাহ তাআলা কতো বড় সমস্যা থেকে তাকে উত্তীর্ণ করেছেন৷

তাই দীর্ঘদিন তাহাজ্জুদ পড়ে দুআ করার পর কবুলের আলামত না পেয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই৷ বরং এই আমল করতে পারার জন্য নিজের শরীর এবং মেযাজ ফুরফুরে থাকা উচিত৷ হতাশা শয়তান সৃষ্টি করে দেয়৷ ইবাদত-বন্দেগির প্রতি অনীহা সৃষ্টি করে৷

লেখাঃ শাইখ জিয়াউর রহমান  

16 January 2020

ঈমান ভঙ্গের কারণ কয়টি এবং কি কি? জানা আবশ্যক

আমরা ওযু ভঙ্গের কারণ জানি, নামায ভঙ্গের কারণ জানি কিন্তু ঈমান ভঙ্গের কারণ জানি কি?


এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় দুই মিনিট সময় ব্যয় করে একটু সংক্ষিপ্তভাবে জেনে নিতে পারেন। নিচে বিষয়গুলো সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো।

ঈমান ভঙ্গের দশটি কারণঃ

(১) আস শিরকঃ

আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদতে শরীক করা। এ ব্যাপারে মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ আল্লাহ্ বলেছেন:


“নিশ্চয় আল্লাহ্ তাঁর সাথে অংশীদার করা ক্ষমা করেন না।ইহা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন; এবং যে কেহ আল্লাহর সাথে শরীক করে সে এক মহা পাপ করে।” (সূরা নিসা ৪: আয়াত ৪৮)


“…….কেহ আল্লাহর সাথে শরীক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যেই হারাম করবেন এবং তার আবাস জাহান্নাম। যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।”
(সূরা মায়িদা ৫: আয়াত ৭২)

কেউ আল্লাহর সাথে যে বিভিন্ন প্রকার শরীক করতে পারে তার মধ্যে রয়েছে অলিহাহ, আরবাব, আনদাদ ও তাগুত। বর্তমান কালের কয়েকটি বড় বড় শিরক সমূহের মধ্যে রয়েছে মাজার ও কবর পূজা, পীর ও আল্লাহর অলিরা গায়েব জানেন, অসুস্থকে সুস্থ করতে পারেন, বাচ্চা দিতে পারেন, বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারেন কিংবা আমাদের খবর জানেন ইত্যাদি ধারণা পোষণ করা।

আল্লাহ্ একমাত্র আইন ও বিধান দাতা। কুরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন সমাজ, রাষ্ট্র, শিক্ষা, বিচার ব্যবস্থা, শাস্তি, অর্থনীতি কিভাবে চালাতে হবে এবং এ সমস্ত ব্যাপারে আল্লাহর দেয়া বিধানই প্রত্যেক মুসলিমের একমাত্র সংবিধান। যদি কেউ আল্লাহর দেয়া সংবিধানের উপর নিজেরা আইন তৈরী করে তবে তারা তাগুত(আল্লাহদ্রোহী, সীমালংঘনকারী)-তে পরিণত হবে। যারা তাগুতের তৈরী সংবিধানকে মানবে, তারা মানার বিষয়ে আল্লাহর সাথে শিরক্ করে মুশরিকে পরিণত হবে। এমনিভাবে আল্লাহর দেয়া শরীয়া আইন বাদ দিয়ে যে সমস্ত বিচারক মানুষের তৈরী করা আইন দিয়ে বিচার ফয়সালা করে তারাও তাগুত।এবং যে সকল লোক তাদের কাছে নিজের ইচ্ছার বিচার ফয়সালা নিয়ে যাবে তারাও শিরকের গুনাহতে লিপ্ত হয়ে ইসলাম থেকে বাদ পড়ে যাবে।

(২) মধ্যস্থতা ধরা

যে ব্যক্তি তার নিজের এবং আল্লাহর মধ্যে মধ্যস্থতা ও যোগাযোগের মাধ্যম বানায় এবং তাদের কাছে তার মনোস্কামনা পূরণের(শাফায়া) জন্য আবেদন নিবেদন করে এবং তাদের উপর নির্ভর করে, সে কাফির (অবিশ্বাসী) হয়ে যায়। ইহাই অতীত ও বর্তমানের আলেমদের ইজমা।


“তারা আল্লাহকে ব্যতিত যার ইবাদাত করে তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না,উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, ‘এইগুলি আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী।’ বল, ‘তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিবে যা তিনি জানেন না?তিনি মহান, পবিত্র’ এবং তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি উর্দ্ধে।”
(সূরা ইউনুস ১০: আয়াত ১৮)


“জেনে রাখ, অবিমিশ্র আনুগত্য আল্লাহরই প্রাপ্য। যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবকরুপে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘আমরা তো এদের পূজা এজন্যই করি যে, ইহারা আমাদেরকে আল্লাহর সান্নিধ্যে নিয়ে যাবে।’ তারা যে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ করছে আল্লাহ তার ফয়সালা করে দিবেন। যে মিথ্যাবাদী ও কাফির আল্লাহ তাকে সৎ পথে পরিচালিত করেন না।” (সূরা যুমার ৩৯:আয়াত ৩)

এর একটি স্পষ্ট উদাহরণ হবে যদি কোন ব্যক্তি মৃত বা জীবিত পীর(ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব) বা দরবেশের কাছে সন্তান দেয়ার বা মনের ইচ্ছা পূরণের জন্য প্রার্থনা করে; এছাড়া তাবীজ দিতে বলে আর বিশ্বাস স্থাপন করে পীরবাবার তাবীজে সে সুস্থ হবে অথবা মনের কামনা পূরণ হবে। এসকল কাজ দ্বারা আল্লাহ তা’য়ালা রুবুবিয়াতের সাথে পীরবাবা বা বুজুর্গকে শরীক করা হয়। ইহা সুস্পষ্ট শিরক্ যা কিনা একজন মুসলিমকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়।

(৩) যে ব্যক্তি বহু্ইশ্বরবাদকে প্রত্যখান না করে বা বহুইশ্বরবাদী (মুশরীক) কাফির কিনা এমন সন্দেহ পোষণ করে সে কাফির হয়ে যায়। উদাহরণ স্বরূপ যদি কোন ব্যক্তি বলে যে, সে নিশ্চিত নয় একজন খৃষ্টান কাফির কিনা, তাহলে সে নিজেই কাফির হয়ে যায়। কারণ সে ঈসা(আ)-কে আল্লাহ হিসেবে গ্রহণকারী খৃষ্টানদের প্রত্যাখান করেনি।

(৪) যে ব্যক্তি মহানবী (সা) এর পরিপূর্ণতা ও দিক নির্দেশনা বা ফয়সালায় অবিশ্বাস করে সে কাফির। এর কারণ হচ্ছে আল্লাহর রাসূল (সা) ও তার ফয়সালা হচ্ছে সীরাতুল মুসতাক্কিমের উপর। আর যারা তাগুতের কাছে যাওয়া বেশি পছন্দ করে তারা সত্য সঠিক পথ হতে বহু দূরে। এই সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, “কারও নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মু’মিনদের পথ ব্যতিত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যে দিকে সে ফিরিয়া যায় সে দিকেই তাকে ফিরাইয়া দিব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব, আর উহা কত মন্দ আবাস।


"নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করবেন না; ইহা ব্যতিত সব কিছু যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন, এবং কেহ আল্লাহর শরীক করলে সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়।”
(সূরা নিসা ৪: আয়াত ১১৫-১১৬)

এই আয়াত দ্বারা পরিষ্কার রুপে প্রমানিত হয় যে রাসূলের প্রদর্শিত পথের বিরোধীতা করা এবং মু’মিনের পথ ছেড়ে অন্য কোন পথ গ্রহণ করা শিরক। এর শাস্তি হচ্ছে নিকৃষ্ট স্থান জাহান্নাম। যদি কোন বিষয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথা দ্বারা প্রমাণিত হয়, তাহলে তা নিয়ে কানাঘুষা করা এবং তা ছেড়ে নিজের মনগড়া পথের বা অন্য কারোর অন্ধ অনুকরণে অন্য পথের আশ্রয় নেয়া সুস্পষ্ট শিরক। আল্লাহ শিরককে কখনই ক্ষমা করবেন না। (৫) যে ব্যক্তি নবী মুহাম্মদ (সা) যা কিছু নিয়ে এসেছেন তাতে অসন্তুষ্ট হয় যদিও সে এ অনুযায়ী কাজ করে, সে কাফির হয়ে যায়। যেমন এক ব্যক্তি যে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে অথচ সে এগুলো করা অপছন্দ করে অথবা এমন এক মহিলা যে হিজাব পরে অথচ সে তা পরা অপছন্দ করে। মহান আল্লাহ বলেন-

“আর মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে যারা বলে,‘আমরা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান এনেছি’, কিন্তু তারা মু’মিন নয়।” (সূরা বাকারা ২; আয়াত ৮)


“কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা মু’মিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচার ভার তোমার(রাসূলের) উপর অর্পণ না করে; অত:পর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্ত:করণে মেনে য়ে।” (সূরা নিসা ৪: আয়াত ৬৫)


(৬) যে ব্যক্তি দ্বীনের আওতার কোন কিছুর ব্যাপারে উপহাস করে বা কৌতুক করে অথবা ইসলামের কোন পুরষ্কার বা শাস্তির ব্যাপারে ব্যাঙ্গ করে সে কাফির হয়ে যায়। এর প্রমাণ হচ্ছে -

“এবং তুমি তাদেরকে প্রশ্ন করলে তারা নিশ্চয়ই বলবে, ‘আমারা তো আলাপ-আলোচনা ও ক্রীড়া-কৌতুক করছিলাম।’ বল, ‘তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর নিদর্শন ও তাঁর রাসূলকে বিদ্রুপ করছিলে?’ ‘তোমরা অযুহাত দেয়ার চেষ্টা করিও না। তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফরী করেছ।….” (সূরা তওবা ৯ : আয়াত ৬৫-৬৬)


(৭) আস সিহর বা জাদু সকল প্রকার যাদু নিষদ্ধ, কেউ এতে অংশগ্রহণ করুক, সময় ব্যয় করুক বা চর্চার প্রতি সহানুভূতিশীল হোক না কেন। যে ব্যক্তি জাদু চর্চা করে বা জাদুতে খুশী হয়, সে কাফির হয়ে যায়। কারণ আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন,

“…সুলায়মান কুফরী করে নাই কিন্তু শয়তানরাই কুফরী করেছিল, তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত….।”
(সূরা বাকারা ২ : আয়াত ১০২)


(৮) যে ব্যক্তি মুশরিককে (বহু ঈশ্বরবাদী কাফের-ইহুদী,খ্রিষ্টান প্রভৃতি) সাহায্য সমর্থন করে এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাকে সহয়তা করে সে কাফির হয়ে যায় কারণ তার কাছে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে এমন একজন মুসলিমের তুলনায় আল্লাহর শত্রু বেশী প্রিয়। ইহার প্রমাণ হচ্ছে মহান আল্লাহ তা’য়ালার এই কথা-

“হে মু’মিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভ্রাতা যদি ঈমানের মুকাবিলায় কুফরীকে শ্রেয় জ্ঞান করে, তবে তাদেরকে অন্তরঙ্গরুপে গ্রহণ করে না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে অন্তরঙ্গরুপে গ্রহণ করে, তারাই যালিম।” (সূরা তওবা ৯:আয়াত ২৩)


“হে মু’মিনগণ! তোমরা ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধুরুপে গ্রহণ করো না, তারা পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেহ তাদেরকে বন্ধুরুপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।” (সূরা মায়িদা ৫ : আয়াত ৫১)


(৯) যদি কোন ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, সে শারিয়ার মধ্যে (আল্লাহর আইন) বিভিন্ন জিনিস যোগ করা বা কতিপয় বিষয় বাদ দেওয়ার মাধ্যমে ইসলামের উন্নতি সাধন করতে পারব তাহলে সে কাফির হয়ে যায়। ইহার কারণ হচ্ছে আল্লাহ তা’য়ালার পরিপূর্ণভাবে সকল মানুষের জন্য তার নবী মুহাম্মদ(সা)-এর কাছে ইসলামের বাণী পাঠিয়েছেন এবং যদি কেউ এটা অস্বীকার করে তাহলে সে কুরআনের এই আয়াতের বিরুদ্ধে যায় -


“…আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।…”(সূরা মায়িদা ৫: আয়াত ৩)


(১০) মুহাম্মদ (সা)-এর প্রতি অবতীর্ণ বাণী শিক্ষা না করা অথবা সে অনুযায়ী কাজ না করার মাধ্যমে কেউ আল্লাহর বাণী থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে সে ইসলামের গন্ডির বাহিরে চলে যায়। আল কুরানে এর প্রমাণ হচ্ছে-

“যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী দ্বারা উপদিষ্ট হয়ে তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার অপেক্ষা অধিক যালিম আর কে? আমি অবশ্যই অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে থাকি।”
(সূরা সাজদা ৩২:আয়াত ২২)

মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ আরো বলেছেন,

“বল, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ বল, ‘আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত হও।’ যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রাখ, আল্লাহ তো কাফিরদেরকে পছন্দ করেন না।”
(সূরা আল ইমরান : ৩১-৩২)


এইগুলোই দশটি বিষয় যা কোন ব্যক্তির ইসলামকে অকার্যকর করতে পারে এবং যদি সে তার ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত না হয় এবং সে মৃত্যু বরণ করার আগে আবার ইসলাম গ্রহণ না করে তাহলে সে একজন মুশরিক (পৌত্তলিক) বা একজন কাফিরের মৃত্যুবরণ করে, আর তার গন্তব্যস্থল হয় অনন্ত কালের জন্য দোজখের আগুন এবং কোনদিনও জাহান্নামের আগুন থেকে বের করা হবে না।

ঈমানের সাথে সম্পর্কিত অতি প্রয়োজনীয় উপরে উল্লেখিত বিষায়াদির প্রতিটি মানুষের নিজে জানা, উপলদ্ধি করা এবং সেই সাথে অন্যকেও জানিয়ে দেয়া আমাদের প্রত্যেকের ঈমানী দায়িত্ব। আসুন আমরা নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হই এবং এই বক্তব্যটি অন্যর কাছে পৌঁছে দেই।


লেখাঃ সংগৃহীত